পুন্ড নগরী বগুড়া
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত বগুড়া একটি প্রাচীন জনপদ যা রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক জেলা। বগুড়া উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে অত্যাধুনিক শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত। বগুড়া প্রাচীনতম ইতিহাসে ভরপুর। প্রাচীন পুন্ড রাজ্যের রাজধানী পুন্ডবর্ধনকে ঘিরে তৈরী হয়েছে বগুড়া জেলার। প্রাচীন পুন্ডবর্ধন বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। ১২৮১-১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লরি সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের ২য় পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দীন বগরা খান বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তাঁর নামানুসারে ‘বগরা’ থেকে ‘বগুড়া’ জেলার নামকরণ করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে ১৯৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বগুড়া জেলার আয়তন ২,৯১৯ কিমি, জনসংখ্যা-২৯,৮৮,৫৬৭ জন। বগুড়া জেলার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলা, পূর্বে জামালপুর জেলা ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলা অবস্থিত ।
বগুড়া জেলা ১৮২১ সালে জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উপজেলা ১২ টি। পৌরসভা ১২ টি, ইউনিয়ন রয়েছে মোট ১০৮ টি। এছাড়া জেলায় ২,৬৯৫ টি গ্রাম, ১,৭৫৯ টি মৌজা রয়েছে। বগুড়া জেলার উপজেলা গুলি হল – সোনাতলা, আদমদিঘী, ধুনট, দুপচাঁচিয়া, গাবতলী, কাহালু, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, শেরপুর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও বগুড়া সদর।
সুফি, মারাঠি, লালন ইত্যাদি নিয়ে বগুড়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বগুড়া থেকে প্রকাশিত কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকার মধ্যে আছে দৈনিক করতোয়া, দৈনিক উত্তরকোণ, দৈনিক বগুড়া, দৈনিক চাঁদনি বাজার, দৈনিক উত্তরাঞ্চল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এখানকার মরিচ ও দই খুব বিখ্যাত। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে গণকবর ৫ ; বধ্যভূমি ১ ; স্মৃতিস্তম্ভ ৩টি।
দর্শনীয় স্থান
- মহাস্থানগড় : মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা হয়। প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷। এখানে আরো রয়েছে:
- মাজার শরীফ
- খোদার পাথর ভিটা
- মানকালীর ঢিবি
- বৈরাগীর ভিটা
- স্কন্ধের ধাপ
- মঙ্গলকোট স্তুপ
- বেহুলা লক্ষিণদ্বর (গোকুল মেধ)
- ভাসু বিহার
- মোহাম্মাদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম এন্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক: নবাব আমলের পাইক-পেয়াদা আর বরকন্দাজের রূপকথা, মডেল করে দেখানো হয়েছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়িতে। নবাবী জীবন প্রণালি এবং নবাবী আমলের সভ্যতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য কয়েকজন গুণী শিল্পীর অক্লান্ত শ্রম ও মেধায় প্রতিষ্ঠিত হয় মোহাম্মাদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম এন্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। দেশের উত্তর জনপদের কেন্দ্রস্থল বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র করতোয়া নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে নবাব প্যালেসের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে এটি। পুরনো প্রাসাদটি বিশাল এক জাদুঘর।
- সাতমাথা: বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র হলো সাতমাথা। এখানেই রয়েছে বগুড়া জিলা স্কুল, শহীদ খোকন পার্ক, জিপিও, সার্কিট হাউজ। সাতমাথা থেকে কবি নজরুল সড়ক (থানা রোড) দিয়ে এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে এশিয়া সুইটস, কোয়ালিটির বিরিয়ানী হাউজ, হোটেল শ্যামলী, হোটেল আকবরিয়া।
- প্রেম যমুনার ঘাট: বগুড়া থেকে ২২ কিমি পূর্বে সারিয়াকান্দিতে রয়েছে প্রেম যমুনার ঘাট। এখানে যমুনার বাঁধে বসে সময় কাটাতে পারেন। এখানে নৌকায় চড়ে যমুনার বুকে বেড়াতে পারেন।
- শ্যামলী পরিবহন, ☎ ০২-৯০০৩৩৩১, ০২-৭৫২০৪০৫
- এসআর ট্রাভেলস, ☎ ০২-৮০১৩৭৯৩, ০২-৮০৬০৮৭৬
- টিআর ট্রাভেলস, ☎ ০১১৯১-৪৯৪৮৬৫, ০১১৯১-৪৯৪৮৬৮
- গ্রীন লাইন পরিবহন, ☎ ০১৭১৬৯৭৬৭৭৫, ৯০০৮৬৯৪
খাওয়া দাওয়া
এখানকার প্রায় সব হোটেলেই বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে:
- বগুড়ার সান্তাহারের টাকি মাছ ও কালোজিরার ভর্তা
- ছোট মাছের চচ্চড়ি
- ঝাল পোলাও
- সেমাইর জর্দা
- বগুড়ার দই
- গরুর মাংসের আলুঘাঁটি
উল্লেখযোগ্য রেস্তোরার মধ্যে রয়েছে:
- আকবরিয়া হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, থানা রোড, বগুড়া
- শ্যামলী হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, থানা রোড, বগুড়া
- সেলিম হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, বিআরটিসি মার্কেট (রেলগেট), বগুড়া
- কোয়ালিটি, থানা রোড, বগুড়া
রাত্রী যাপন
এই জেলায় থাকার জন্য রয়েছে অনেক হোটেল ও মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- হোটেল নাজ গার্ডেন, সিলিমপুর,বগুড়া, ☎ +৮৮০৫১-৬২৪৬৮, ফ্যাক্স: +৮৮০৫১৫১৩৭৬, ইমেইল: info@hotelnazgarden.com।
- মম ইন হোটেল এন্ড রিসোর্ট, ☎ +৮৮০ ৫১৬২০৪, ইমেইল: reservation@momoinn.com
- পর্যটন মোটেল, বনানী মোড়, বগুড়া, ☎ +৮৮০৫১-৬৬৭৫৩, ফ্যাক্স: +৮৮০৫১ ৬৬৭৫৩।
- সেফওয়ে মোটেল, চার মাথা, বগুড়া
- সেঞ্চুরি মোটেল, চার মাথা, বগুড়া
- মোটেল ক্যাসল এম এইচ, বগুড়া
- আকবরিয়া আবাসিক হোটেলথানা রোড, বগুড়া, ☎ ৬৬৯৯৭
- আমজাদিয়া হোটেল টেম্পল রোড, সাতমাথা, বগুড়া, ☎ ৬৩৬৪২
- হোটেল আল মদিনা হোটেলথানা রোড, বগুড়া, ☎ ০১৭১১-৭০৮৫৭৮
- আজাদ গেস্ট হাউজনিউ মার্কেট, বগুড়া, ☎ ৬৬৩৪২
- অন্নপূর্ণা আবাসিক হোটেলপ্রজা বাহিনী প্রেস লেনথানা রোড, বগুড়া, ☎ ৬২৪৪১
- বগুড়া বোডিং নবাব বাড়ী রোড, বগুড়া
- রহমানিয়া বোডিং, নবাব বাড়ী রোড, বগুড়া, ☎ ৬৭৪০২
- আল আমিন আবাসিক হোটেল, আল আমিন কমপ্লেক্স, নবাব বাড়ী রোড, বগুড়া, ☎ ৫১৯৩৭
- ওয়েল ফেয়ার হাউজনবাব বাড়ী রোড, বগুড়া, ☎ ৬৭৮৭৫
- মুন বোডিং ঝাউতলা, বগুড়া, ☎ ৬৫৪৯৮
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম (১৯৩৫-১৯৮১) – সাবেক রাষ্ট্রপতি
- প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮) – ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনের নেতা
- মোহাম্মদ আলী বগুড়া (মৃত্যুঃ ১৯৬৯) – কূটনীতিক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
- খাদেমুল বাশার, বীর উত্তম (১৯৩৫-১৯৭৬) – মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বিমান বাহিনীর সবেক প্রধান
- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭) – সাহিত্যিক ও গল্পকার
- গাজীউল হক (১৯২৯-২০০৯) – ভাষা সৈনিক
- এম. আর. আখতার মুকুল (১৯২৯-২০০৪) – লেখক এবং সাংবাদিক
- মনোজ দাশগুপ্ত (১৯৪৯-১৯৯৭) – কবি ও লেখক
- মুশফিকুর রহিম – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টেস্ট দলের সাবেক অধিনায়ক
- রোমেনা আফাজ – সাহিত্যিক
- শফিউল ইসলাম সুহাস – একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার
- এনামুল হক – (একুশে পদক ২০১৪, স্বাধীনতা পদক ২০১৭)
- অপু বিশ্বাস – একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী
- ফরিদুর রেজা সাগর – চ্যানেল আই চেয়ারম্যান
- তারেক রহমান – রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
- মাহমুদুর রহমান মান্না – নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক
Leave a Reply