ছেঁড়া দ্বীপ
নীল সমুদ্র, তার মাঝে একখণ্ড সবুজে ঘেরা বন। দূর থেকে দেখলে সারিসারি নারিকেল গাছ আর সামুদ্রিক ঢেউ ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বশেষ দক্ষিণে এই দ্বীপেরয় অবস্থান, এর পরে বাংলাদেশের আর কোন ভূখণ্ড নাই বলছি ছেড়া দ্বীপের কথা। জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে এমন নাম হয়েছে দ্বীপটির। আঞ্চলিক ভাষায় বা স্থানীয়রা স্থানটিকে সেরাদিয়া বা ছেড়াদিয়াও বলে।
ছেঁড়া দ্বীপের আয়তন তিন কিলোমিটার। ২০০০ সালের শেষের দিকে এটির সন্ধান পাওয়া যায়। সেন্টমার্টিন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থিত। দ্বীপটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আঁচড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। সুনীল সাগর, আকাশ আর সূর্যাস্তের মিতালী দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ছেঁড়া দ্বীপে বেড়াতে আসে।
চাঁদনী রাতে ছেড়া দ্বীপ সাজে তার অপরুপ সাজে। চাঁদনী রাতে যে কোন ভ্রমণকারীর মনভরে যাবে ছেড়া দ্বীপের অপরুপ শোভা অবলোকন করে। ছেড়া দ্বীপের একদম উপরের দিকটাতে ভরা পূর্ণিমাতে ক্যাম্পিং করে থাকার মজাই আলাদা।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার আর টেকনাফ হয়ে তারপর ট্রলার বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে আসতে হয় ছেঁড়া দ্বীপে। আর দ্বীপে পা দিয়েই প্রথমে যে বিষয়টি আপনার নজর কাড়বে সেটি হলো অজস্র কালো আর সাদা প্রবালে ভরা বিস্তীর্ন সৈকত। এই সৈকতের প্রবাল প্রাচীরেই অবিরত আছড়ে পড়ছে সাগরের ফেনিল ঢেউ।
প্রবালের অংশগুলো পেরিয়ে আরেকটু সামনে এগুলেই দেখা মেলে বুনো ঝোপ ও কেয়া গাছের ছোট ছোট সারি। তবে এই গাছগুলোর বাইরে পুরো দ্বীপে আর কোনো বড় গাছ চোখে পড়ে না। তবে বৃক্ষরাজির এই অভাব যদি আপনার সৌন্দর্যবোধকে কিছুমাত্রও আহত করে তাহলে সেই আঘাত পুরোপুরি পুষিয়ে দিতে এখানে রয়েছে রঙ-বেরঙের বহু মাছ আর বাহারি সব শামুক-ঝিনুক। ছেঁড়া দ্বীপের পানি অনেক স্বচ্ছ বলে পানির নিচে নানা রঙের মাছগুলোর ইতস্তত চলাফেরা দেখতে খুবই ভালো লাগে।
আবার নাম না জানা অগনিত এই মাছেদের ভিড়ে মাঝে মাঝে দেখা মেলে জেলিফিশেরও। এছাড়া পর্যটকদের খুব একটা ভিড় না থাকলে কখনো কখনো দ্বীপের সৈকতে ডলফিন আর মাথার ওপর উড়ন্ত গাঙচিলেরও দেখা মেলে। কখনো চোখে পড়ে দু’একটা সাপ এবং সাগরশসা নামের বিচিত্র এক প্রাণীরও। যদিও এত কিছুর মাঝে অনেকের দৃষ্টিতেই ছেঁড়া দ্বীপের মূল আকর্ষণ হলো এখানে দেখা মেলা নানা জাতের জীবন্ত প্রবালগুলো দ্বীপের সামনে একটু পানিতে নেমে প্রবাল পাথরের ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে আপনারও চোখে পড়তে পারে এমনি কোনো জীবন্ত প্রবাল।
আর এসব কিছুর পাশাপাশি যদি ছেঁড়া দ্বীপে বসে দেখা যায় সূর্যাস্তের দৃশ্যও তাহলে তো কথাই নেই। যদিও ছেঁড়া দ্বীপে কোনো আবাসন সুবিধা না থাকায় এখানে সূর্যাস্ত দেখার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা এবং নিরাপদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে একটি মাত্র পরিবার বসবাস করে। হোসেন আলীর এ পরিবারে রয়েছে চার সন্তান। বড় ছেলে সাদ্দাম, মেয়ে মৌসুমী, অন্য দুই সন্তান ও স্ত্রী রহিমা খাতুনকে নিয়ে হোসেন আলীর সংসার। ১৯৯৭ সাল থেকে হোসেন আলী পরিবার নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপে বসবাস করছেন। আগত পর্যটকদের ঘিরেই এদের জীবন আচার। একটি দোকান যেখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন আইটেমের জুস ও পানি। এছাড়া কেউ চাইলে এখানে দুপুর ও রাতের খাবারও সেরে আসতে পারেন।
সেন্টমার্টিন থেকে ছেঁড়া দ্বীপ
ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ। আর টেকনাফ থেকে সি ট্রাক বা লঞ্চে চড়ে সেন্টমার্টিন এখন যে কোন পর্যটকের কাছে মুখস্ত পথ। সেন্টমার্টিনের জেটি থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার স্পীড বোট ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার পাওয়া যায়। ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার ভাড়া সাধারণত সিজনের উপর নির্ভর করে। পর্যটনের মৌসুমভেদে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। আর যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে জোয়ার ভাটার সময় জেনে পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল ভাড়া নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।
কি খাবেন ও কোথায় খাবেন
দুই-তিনটি চায়ের দোকান ও ডাব, তরমুজ ছাড়া ছেঁড়া দ্বীপে আর তেমন কিছুই নেই। এখানে কিছু খেতে চাইলে আপনাকে সাথে খাবার পরিবহন করতে হবে। এছাড়া সেন্টমার্টিনে ফিরে গিয়ে খাবার খেতে পারেন।
সেন্টমার্টিনে খেতে পারেন কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা ইত্যাদি নানান ধরনের স্বাদের মাছ। সেন্টমার্টিনের কিছু উল্লেখযোগ্য রেস্তোরাঁ হল কেয়ারি মারজান রেস্তোরাঁ, বিচ পয়েন্ট, হোটেল আল্লার দান, বাজার বিচ, আসাম হোটেল, সি বিচ, সেন্টমার্টিন, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, রিয়েল রেস্তোরাঁ, হাজী সেলিম পার্ক, সেন্টমার্টিন টুরিস্ট পার্ক, হোটেল সাদেক ইত্যাদি। তবে খাবার আগে অবশ্যই খাবারের মান ও মূল্য একটু যাচাই করে নিন।
সেন্টমার্টিনে ট্রিপ, হোটেল ও তথ্য সহযোগিতার প্রয়োজনে যোগাযোগ- #টিজিবি হেল্প লাইনঃ +8801877722851 থেকে +8801877722855
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, উদ্যোক্তা, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, টেকনাফ, কক্সবাজার, 01818090767, saintmartinudc@gmail.com
Leave a Reply