দিনাজপুর
দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ জেলা। দিনাজপুর জেলা উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার মধ্যে বৃহত্তম। এই অঞ্চল ভূতাত্ত্বিকভাবে ভারতীয় প্লেটের অংশ যা আদি জুরাসিক যুগে সৃষ্টি হওয়া গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ ছিল। দিনাজপুর একসময়ে পুণ্ড্রবর্ধনের অংশ ছিল। দিনাজপুর জেলা ১৭৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি আছে, জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসারেই রাজবাড়িতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় “দিনাজপুর”। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে “দিনাজপুর”।
দিনাজপুর জেলার উত্তরে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলা, দক্ষিণে জয়পুরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে রংপুর ও নীলফামারী জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাদ্বয় অবস্থিত। এই জেলার মোট আয়তন প্রায় ৩৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার।
দিনাজপুর জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা, ১০১টি ইউনিয়ন ও প্রায় ২১৪২টি গ্রাম রয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে- দিনাজপুর সদর, বিরামপুর, খানসামা, বীরগঞ্জ, বোচাগঞ্জ, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, কাহারোল, নবাবগঞ্জ, পার্বতীপুর ও বিরল।
দিনাজপুর জেলার জনসংখ্যা ২৬,৪২,৮৫০ জন। দিনাজপুর জেলায় সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহলী, মালপাহাড়ী, কোল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।প্রধান নদী: যমুনা, তুলসীগঙ্গা, পূনর্ভবা, আত্রাই। লোকসংস্কৃতি হিসেবে ভাওয়াইয়া গান, কীর্তন, পাঁচালী, মেয়েলি গীত, গোরক্ষনাথের গান, চড়কের গান, বাউল সংগীত, প্রবাদ প্রবচন, ছড়া, ছিলকা, হেয়ালী, ধাঁধাঁ, জারিগান উল্লেখযোগ্য।
দিনাজপুর জাদুঘর দিনাজপুরের মহারাজার বিভিন্ন নিদর্শনের স্মারকবাহী একটি জাদুঘর। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহশালা। এছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গাগুলো হল
- অরুণ ধাপ
- বার পাইকের গড়
- ঘোড়াঘাট দুর্গ
- প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির, কাহারোল
- কালিয়া জীউ মন্দির
- রামসাগর
দর্শনীয় স্থান
- নয়াবাদ মসজিদ
- কান্তজীর মন্দির
- স্বপ্নপুরী (বিনোদন পার্ক)
- দিনাজপুর রাজবাড়ী
- রামসাগর
- ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- কয়লাখনি
- হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ
- জিয়া হার্ট ফাউন্ডেসন
- গাওসুল আজম বি এন এস বি চক্ষু হসপিটাল
- দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড
- পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন
- হিলি সীমান্ত
কিভাবে যাবেন?
সড়ক পথে- ঢাকার গাবতলী-কল্যাণপুর ও মহাখালী থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলি ছেড়ে যায়। বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, এস এ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি।
রেল পথ- ঢাকা থেকে দিনাজপুর রেলে যেতে প্রায় ১০ ঘন্টা লাগে।
একতা এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে ছাড়ে সকাল ১০ টায় এবং দিনাজপুর থেকে রাত ৯ টা ২০ মিনিটে। সাপ্তাহিক ছুটি সোমবার।
দ্রুতযান, ঢাকা থেকে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিট এবং দিনাজপুর থেকে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে। সাপ্তাহিক ছুটি বুধবার।
আকাশ পথে-
খাওয়া দাওয়া
দিনাজপুর জেলা লিচুর জন্য বিখ্যাত। এ জেলায় বাংলাদেশের সেরা লিচু উৎপন্ন হয়। এ জেলায় বিভিন্ন জাতের লিচু উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মাদ্রাজী, বোম্বাই, বেদানা ও চায়না-৩।
রাত্রী যাপন
দিনাজপুর শহরে ভাল মানের হোটেলে থাকতে চাইলে পর্যটন মোটেলে থাকা যাবে। সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল ডায়মন্ড, নিউ হোটেল, হোটেল আল রশিদ, হোটেল রেহানা, হোটেল নবীন, ইত্যাদি। এছাড়া রামসাগরে অবস্থিত স্থানীয় বন বিভাগের বাংলোতে জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে থাকা যায়।
বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব
- বেগম খালেদা জিয়া
- খুরশীদ জাহান হক
- হাজী মোহাম্মদ দানেশ
- সাহিত্যিক শেখ ফজলুল করিম
- ফকির মজনুশাহ
- ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব
- অধ্যাপক ইউসুফ আলী
- শহীদ মেজর মাহবুব (বীর উত্তম),
- কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ
Leave a Reply