রসমঞ্জুরীর গাইবান্ধা
ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত জেলা গাইবান্ধা। বৌদ্ধ, হিন্দু, মোঘল, পাঠান আমলসহ ইংরেজ শাসনামলের নানা সংগ্রাম-বিদ্রোহের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে চলছে এ অঞ্চলটি। কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ৫২০০ বছর আগে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় বিরাট রাজার রাজধানী ছিল। বিরাট রাজার প্রায় ৬০ (ষাট) হাজার গাভী ছিল। সেই গাভী বাধার স্থান হিসাবে গাইবান্ধা নামটি এসেছে বলে কিংবদন্তী রয়েছে। ১৯৮৪ ইং সালের ১৫ অগাস্ট বুধবার ২রা ফাল্গুন ১৩৯০ বাংলা ১২ ই জমাদিউল আউয়াল ১৪০৪ হিজরী সনে গাইবান্ধা জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
গাইবান্ধা জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। এই জেলার উত্তরে কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলা, দক্ষিণে বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা, পূর্বে জামালপুর জেলা, তিস্তা ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে রংপুর, দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলা অবস্থিত।
আয়তন: ২১৭৯.২৭ বর্গ কিমি। জনসংখ্যা মোট=২৪,৩০,৬২৭ জন। গাইবান্ধা সদর, সাদুল্লাপুর, ফুলছড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সাঘাটা এবং সুন্দরগঞ্জ নিয়ে উপজেলা-০৭টি, থানা-০৭টি, পৌরসভা-০৩টি, ইউনিয়ন-৮২টি, মৌজা-১১০৬টি, গ্রাম- ১২৪৯ টি।
লোকসংস্কৃতি হিসেবে এ জেলায় পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, জারীগান, সারিগান, বিয়ের গীত, ছড়া গান প্রভৃতি প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিয়ে, সন্তান জন্ম এবং শোক প্রভৃতি উপলক্ষে নৃত্য-গীতের আয়োজন করে। জেলার প্রধান নদ ও নদী-ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা নদী, যমুনা, ঘাঘট, বাঙালি নদী।
দর্শনীয় স্থান
- বালাসী ঘাট, (ফুলছড়ি
- প্রাচীন মাস্তা মসজিদ, (গোবিন্দগঞ্জ)
- নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, (সাদুল্লাপুর)
- ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার, (ফুলছড়ি)
- রংপুর সুগার মিলস্ লিমিটেড, (গোবিন্দগঞ্জ)
- ঘেগার বাজার মাজার, (সাদুল্লাপুর)
- ড্রীম সিটি পার্ক,(সাঘাটা)[৫]
- গাইবান্ধা পৌর পার্ক,(গাইবান্ধা সদর)
- ড্রীমল্যান্ড, (পলাশবাড়ী সদর)
- হযরত শাহ জামাল (রাঃ) মাজার শরীফ, (সাদুল্লাপুর)
- জামালপুর শাহী মসজিদ, (সাদুল্লাপুর)
- এসকেএস ইন, (গাইবান্ধা সদর)
- রাজাবিরাট প্রসাদ, (গোবিন্দগঞ্জ)
- পাকড়িয়া বিল, (সাদুল্লাপুর)
- বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব
- শাহ্ আব্দুল হামিদ (স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্পীকার। )
- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (সাহিত্যিক)
- আবু হোসেন সরকার (পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশীক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন)
- মাহাবুব এলাহী রন্জু, বীর প্রতীক (মহান মুক্তিযুদ্ধে গাইবান্ধা এলাকার গৌরব রন্জু কম্পানীর কমান্ডার)
- প্রফেসর ড. এম.আর সরকার (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য)
- ফজলে রাব্বী মিয়া (ডেপুটি স্পিকার)
জেলার ঐতিহ্য
রাজাবিরাট প্রসাদপাল
রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়ে অষ্টম শতাব্দীর শেষ ভাগে (৭৪৩ -৮০০ খৃষ্টাব্দ) দক্ষিণ পূর্ব বাংলার সমতটে দেব বংশ নামে একটি রাজ বংশ প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করতেন। আলোচ্য রাজাবিরাট এই দেব বংশ ও পূন্ড্র নগরের আওতাভুক্ত। বলা হয়ে থাকে যে, মহাভারত রচনার প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে (বর্তমান) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এই রাজ প্রাসাদটি ছিল।
নলডা্ঙ্গার জমিদার বাড়ী
উপমহা দেশের প্রখ্যাত নাট্যকর-শিল্পী, চলচিত্রকর তুলশি লাহিড়ীর স্মৃতি বিজড়িত নলডা্ঙ্গার জমিদার গাইবান্ধা জেলার ইতিহাসে সবর্ন স্বাক্ষর। এখানে পৃত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে ভগ্নপ্রায় কুষ্ট পাথরের শিবলি্ঙ্গ, শ্বেত পাথরের বৃষ মন্দিরসহ সৃদর্শন নকশা রয়েছে।
বামনডা্ঙ্গার জমিদার বাড়ী
বর্তমানের বামনডা্ঙ্গার জমিদার বাড়ী এখন স্মৃতিময় ঐতিহাসিক নির্দশন। এই জমিদার বাড়ীটি এখন পরিত্যক্ত হলেও বসতবাড়ী, কাচারী গৃহ, মন্দির, কয়েদখানা দীর্ঘ সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বাক্ষর হয়ে উঠতে পারে। জমিদার বাড়ীর একটি ফলক থেকে জানা যায়, ১২৫২ সালে এটি নির্মিত হয়। বাড়ীর পার্শ্বে একটি শিব মন্দির রয়েছে। সূনীতি বালা দেবীর কাচারী ঘর থাকলেও এটি আর এখন তা দেখার মতো নেই।উপমহা দেশের প্রখ্যাত নাট্যকর-শিল্পী, চলচিত্রকর তুলশি লাহিড়ীর স্মৃতি বিজড়িত নলডা্ঙ্গার জমিদার গাইবান্ধা জেলার ইতিহাসে সবর্ন স্বাক্ষর। এখানে পৃত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে ভগ্নপ্রায় কুষ্ট পাথরের শিবলি্ঙ্গ, শ্বেত পাথরের বৃষ মন্দিরসহ সৃদর্শন নকশা রয়েছে।
বর্ধনকুঠি
সুদূর প্রাচীন কাল থেকে (বর্তমান) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাধীন বর্ধনকুঠি তৎকালীন রাজা বাদশাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিট ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর গুরুতে এখানে রাজা রামপাল এখানে বাসুদেব মন্দির নির্মাণ করেন। তখন রাজা মানসিংহ বাংলার সুবাদার ছিলেন। ইংরেজ আমলে তা জমিদার বাড়ী হিসেবে খ্যাতি পায় ।মীরের বাগানের ঐতিহাসিক শাহ্ সুলতান গাজীর মসজিদবর্তমান গাইবান্ধা জেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত এ প্রাচীনতম মসজিদ । মসজিদ গাত্রের শিলা লিপি থেকে পাওয়া তথ্য মতে ১৩০৮ইং সালে সৈয়দ ওয়াজেদ আলী নামক এক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এ মসজিদ আবিষ্কার করে সংস্কার করেন। পরবর্তীতে শাহ্ সুলতান নামক এক ধর্মযোদ্ধার নাম এর সাথে জড়িয়ে যায় । তাঁর নামেই এ মসজিদ পরিচিতি পায় । শাহ্ সুলতান মসজিদের পাশেই এ মাজার অবস্থিত। বর্তমানে প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে মেলা বসে।
ভরতখালী
কাষ্ঠ মন্দির (কালি মন্দির)ভরতখালী কাষ্ঠ মন্দির (কালি মন্দির) এ অঞ্চলের হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থ স্থান। ধারণা করা হয় প্রায় -দু’শ বছর পূর্বে এ মন্দির নির্মিত হয়েছিল। এই মন্দিরকে ঘিরে আলৌলিক জনশ্রুতি রয়েছে।যমুনা নদী থেকে ভেসে একটি পোড়া কাষ্ঠ থেকে এই মন্দির সৃষ্টি হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তৎকালীন জমিদার রমনী কান্ত রায় স্বপ্নাদেশ পান- আমি তো ঘাটে এসেছি, তুই আমাকে পূজা দে। রাজা এই কাঠের গুড়িটিকে পুজা দিলে এখান থেকেই এটি কালী মুর্তিতে রুপান্তরিত হয়ে নিয়মিত পুজা আর্চনায় ব্যবস্থা হয়ে ওঠে। কিংবদন্তী আছে দেবী কন্যা যমুনার কালী মন্দিররে দেবীর দর্শনে আসেন। কয়েক বছর আগে যমুনা নদী এখানে আসলেও পরে মন্দিরের কাছ থেকে ভা্ঙ্গন বন্ধ হয়। এরপর স্বপ্নাদেশে পাঠাবলী দেওয়ার নির্দেশ অনুযায়ী এখানে প্রতিবছর বৈশাখে মাসব্যাপী পাঠাবলীর আয়োজন করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলী লোকজনের একটি একটি প্রার্থনার স্থান এটি।
মহিমাগঞ্জ চিনিকল
১৯৫৫ সালে ৯৩ একর জমির উপর নির্মিত হয় রংপুর চিনিকল যা বর্তমান গাইবান্ধা জেলা মহিমাগঞ্জে অবস্থিত। দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দি পারিদিয়ে ২০০১ সালের পর নানাপ্রতিকূলতায় মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়ে কয়েক হাজার শ্রমিক ও প্রায় ৩০ হাজার আখ চাষী। বিগত ২০০৭সালে মিলটি পূনরায় চালূ করা হয়। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা পনের হাজার মে:ট:।
শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
১৯১৬ খৃ: প্রতিষ্ঠিত শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৮৫ খ্রি: এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। ২০০২ খ্রিঃ বিদ্যালয়টি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট প্রাথমিক বিদ্যায় নির্বাচিত হয় । এ খানের আবাসিক- অনাবাসিক মোট ১২৩২ জন ছাত্র/ছাত্রী এ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে।
ভবানীগঞ্জ পোষ্ট অফিস
আজেকর গাইবান্ধা জেলার মহকুমা হিসেবে যাত্রা শুরু ফুলছড়ির ভবানীগঞ্জ গ্রামে। সাবেক পাতিলাদহ পরগনায় ১৯৫৮সালের ২৭ আগষ্ট ভবনাীগঞ্জ মহকুমার কর্মকান্ড শুরু হয়। তবে ১৭৫৩ সালে থানা ঘোষিত হওয়ার পর মুলত প্রশাসনিক বিভিন্ন স্থাপনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে ডাকঘর। যার মাধ্যআেধুনিক পত্র বিনিমিয় সম্পর্কে এই অঞ্চলের মানুষ ওয়াকিবহাল হন।
খাওয়া দাওয়া
গাইবান্ধা সদরে বেশ কিছু ভালো খাবারের দোকান রয়েছে। তবে গাইবান্ধার তৈরি রসমঞ্জুরী মিষ্টান্ন যাচ্ছে দেশ পেরিয়ে বিদেশে। ইতোমধ্যে রসমঞ্জুরী জেলা নামেও গাইবান্ধা পরিচিত লাভ করছে বিভিন্ন জায়গায়। স্বাদে অতুলনীয় উত্তরবঙ্গের মধ্যে বিখ্যাত এ রসমঞ্জুরী বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য আসেন কেউ কেউ। ভেজালমুক্ত হওয়ায় এ রসমঞ্জুরী নিয়মিত খেয়ে খুশি স্থানীয়রা। রসমঞ্জরী তৈরির উপকরণে রয়েছে গরুর খাঁটি দুধ, ছানা, চিনি ও ছোট এলাচ। বর্তমানে জেলার কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে রসমঞ্জুরী পাওয়া যায়। যার প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা।
কিভাবে যাবেন?
সড়ক পথে ঢাকা হতে গাইবান্ধা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, আব্দুল্লাহপুর থেকে গাইবান্ধাগামী বাস পাওয়া যায়। গাইবান্ধাগামী বাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- আলহামরা পরিবহন, গাবতলি, ☎ ০১৭২১-৮০২০৩১
- নাবিল পরিবহন, গাবতলি, ☎ ৯০০৭০৩৬, ৯০১৩৬৮২
- এস আর ট্র্যাভেলস, গাবতলি, ☎ ০১৭১১-৩৯৪৮০১, উত্তরা, ☎ ০১৫৫২৩১৫৩১৮
- শাহ ফতেহ আলী, মহাখালি, ☎ ০১১৯৩২২১০৮৫, উত্তরা, ☎ ০১১৯৩২২১০৮৪
- আল হামরা ট্র্যাভেলস, গাবতলি, ☎ ০১৭২১-৮০২০৩১
Intercity Trains from Gaibandha:
Train No | Name | Off Day | From | Departure | To | Arrival |
713 | Karotoa Express | No | Ghaibandha | 11:02 | Burimari | 15:00 |
714 | Karotoa Express | No | Ghaibandha | 19:36 | Shantahar | 22:00 |
751 | Lalmoni Express | Friday | Ghaibandha | 06:30 | Lalmanirhat | 08:20 |
752 | Lalmoni Express | Friday | Ghaibandha | 12:15 | Dhaka | 20:55 |
767 | Dolanchapa Express | No | Ghaibandha | 15:49 | Dinajpur | 20:20 |
768 | Dolanchapa Express | No | Ghaibandha | 09:59 | Santahar | 12:20 |
771 | Rangpur Express | Sunday | Ghaibandha | 17:00 | Rangpur | 19:00 |
772 | Rangpur Express | Sunday | Ghaibandha | 21:50 | Dhaka | 06.05 |
Mail/Express Trains From Gaibandha :
Train No | Name | Off Day | From | Departure | To | Arrival |
7 | Uttarbango Mail | No | Ghaibandha | 13:14 | Panchagar | 21:30 |
8 | Uttarbango Mail | No | Ghaibandha | 18:48 | Shantahar | 22:40 |
19 | Bogra Express | No | Ghaibandha | 19:38:00 PM | Lalmonirhat | 22:00 |
20 | Bogra Express | No | Ghaibandha | 08:43 | Santahar | 12:40 |
21 | Padmaragh Express | No | Ghaibandha | 09:59 | Lalmonirhat | 12:25 |
22 | Padmaragh Express | No | Ghaibandha | 17:01 | Santahar | 20:10 |
59 | Ramsagor Express | No | Ghaibandha | 07:03 | Dinajpur | 13:30 |
60 | Ramsagor Express | No | Ghaibandha | 21:10 | Bonarpara | 21:45 |
Leave a Reply