দক্ষিণের দ্বার মাদারীপুর
দক্ষিণের দ্বার মাদারীপুর একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ। পঞ্চদশ শতাব্দীর সাধক হযরত বদরুদ্দিন শাহ্ মাদার (রঃ) এর নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বয়ে এসেছে আজকের এই মাদারীপুরের ইতিহাস। প্রাচীন কাল থেকে ইংরেজ আমলের পূর্ব পর্যন্ত অতি প্রাচীনকালে মাদারীপুরের নাম ছিল ইদিলপুর।
মাদারিপুর ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। এর উত্তরে ফরিদপুর জেলা ও মুন্সিগঞ্জ জেলা, পূর্বে শরিয়তপুর জেলা, পশ্চিমে ফরিদপুর জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা, এবং দক্ষিণে গোপালগঞ্জ জেলা ও বরিশাল জেলা। এই জেলার মোট আয়তন প্রায় ১১২৫.৬৯ বর্গ কিলোমিটার। মোট জনসংখ্যাঃ ১২,১২,১৯৮ জন।
প্রশাসনিক এলাকা- মাদারিপুর জেলায় ৩ টি সংসদীয় আসন, ৪ টি উপজেলা (মাদারিপুর সদর, শিবচর, কালকিনি ও রাজৈর), ৫ টি থানা , ৪ টি পৌরসভা, ৫৯ টি ইউনিয়ন পরিষদ , ১০৬২ টি গ্রাম, ৪৭৯ টি মৌজা রয়েছে।
নদীসমূহ- এ জেলায় প্রায় ১০টি নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে – পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ নদী, কুমার আপার নদী, কুমার লোয়ার নদী, বিশারকন্দা-বাগদা নদী, টর্কি নদী, পালরদী নদী, পালং নদী, মাদারিপুর নদী এবং ময়নাকাটা নদী। লোকসংস্কৃতি- এ জেলায় ত্রিনাথের মেলা, সংক্রান্তি মেলা, রথ মেলা, গণেশ পাগলের কুম্ভ মেলা প্রভৃতির প্রচলন রয়েছে। লোকসংগীত- মাদারিপুরে মূলত গাজীর গান, কীর্তন, পাঁচালি, ধুয়াগান, বাউল গান, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া, ছিলকা, হেয়ালি, ধাঁধা, জারিগান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিচিত। এছাড়া জেলার মতুয়া সম্প্রদায় (রাজৈর) দুর্গাপূজায় মতুয়া সঙ্গীতের আয়োজন করে।
মাদারীপুরে মূল্যবান গাছের সংখ্যা খুবই কম। এখানে কোন রাষ্ট্রীয় বনভূমি নেই। জেলায় নারিকেল, সুপারি খেজুর ও তালগাছ প্রচুর জন্মে। মাদারীপুরের খেঁজুরের গুড় খুবই বিখ্যাত। বিলুপ্ত প্রায় বন্য প্রানীদের মধ্যে রয়েছে-খেঁকশিয়াল, বাগডাসা, খাটাস, বেজি, গুইসাপ, রক্তচোষা, বাদুর ইত্যাদি।বিলুপ্ত প্রায় পাখিগুলো হচ্ছে- শঙ্খচিল, দাড়কাক, তিলাঘুঘু, কাটঠোকরা, লক্ষ্মীপেঁচা, কানাকুয়া, ডাহুক, পানকৌড়ী, ভাতশালিক ইত্যাদি।এছাড়া চিতল, বোয়াল, পাবদা ও মাগুর সহ প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার পথে।
দর্শনীয় স্থান
- আউলিয়াপুর নীলকুঠি – ছিলারচর,
- আলগী কাজি বাড়ি মসজিদ – বাহাদুরপুর,
- কুলপদ্দি জমিদার বাড়ি ও আবহাওয়া অফিস,
- খালিয়া শান্তিকেন্দ্র – খালিয়া,
- চরমুগরিয়া ( প্রাচীন বন্দর ও বানরের অভয়ারন্য)
- ঝাউদি গিড়ি – ঝাউদি,
- নারায়ণ মন্দির – পানিছত্র,
- পর্বতের বাগান- মস্তফাপুর,
- প্রণব মঠ- বাজিতপুর,
- মঠের বাজার মঠ – খোয়াজপুর,
- শকুনি দীঘি,
- মিঠাপুর জমিদার বাড়ি – মিঠাপুর
- রাজারাম মন্দির – খালিয়া,
- শাহ মাদার (রঃ) দরগাহ শরীফ,
- সূফী আমীর শাহ (রঃ) এর মাজার শরীফ,
- সেনাপতি দিঘি – আমড়াতলা ও খাতিয়াল।
- খালিয়া জমিদার বাড়ি
- শাহ মাদার (রঃ) দরগাহ শরীফ,
- সূফী আমীর শাহ (রঃ) এর মাজার শরীফ,
- আলগী কাজি বাড়ি মসজিদ – বাহাদুরপুর,
- রাজারাম মন্দির – খালিয়া,
- ঝাউদি গিড়ি – ঝাউদি,
- আউলিয়াপুর নীলকুঠি – ছিলারচর,
- মিঠাপুর জমিদার বাড়ি – মিঠাপুর
- প্রণব মঠ- বাজিতপুর,
- মঠের বাজার মঠ – খোয়াজপুর,
- খালিয়া শান্তিকেন্দ্র – খালিয়া,
- পর্বতের বাগান- মস্তফাপুর,
- মাদারিপুর শকুনী দিঘি,
- সেনাপতির দিঘি – আমড়াতলা ও খাতিয়াল,
- চরমুগরিয়া ( প্রাচীন বন্দর ও বানরের অভয়ারন্য)
- নারায়ণ মন্দির- পানিছত্র,
- কুলপদ্দি জমিদার বাড়ি ও আবহাওয়া অফিস
কিভাবে যাবেন?
মাদারিপুর রাজধানী ঢাকা থেকে ৮৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার সাথে সড়ক ও নৌপথে মাদারিপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। ঢাকা সরাসরি মাওয়া ঘাট তারপর লঞ্চে যেতে হয়। ফেরি পারাপার বাসও আছে। মাওয়া থেকে স্পিড বোটে খুব কম সময়ে যাওয়া যায়। ভাড়া- ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাট-১০০/= স্পিড বোটে ১৫০/=
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- হাজী শরীয়তুল্লাহ – ধর্মীয় সংস্কারক ও ফরায়েজী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা;
- ড. ফজলুর রহমান খান বাংলাদেশের ডাকটিকিটে
- শাহ মাদার – প্রখ্যাত সূফী সাধক;
- কেদার রায় – বার ভুঁইয়ার অন্যতম ও বিক্রমপুর পরগনার জমিদার;
- আলাওল – মহাকবি;
- রাজা রাম রায়চৌধুরী (১৬ শতাব্দী) – রাজৈরের খালিয়া অঞ্চলের জমিদার;
- মৌলোবী আব্দুল জব্বার ফরিদপুরী – বিশিষ্ট উর্দু কবি ও লেখক;
- পীর মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া – ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা;
- অম্বিকাচরণ মজুমদার – বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী; ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি (১৯১৬);
- সূফী আমির শাহ – প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক;
- পুলিন বিহারী দাস – ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রধান (১৯০৭-১০);
- কিরণ চাঁদ দরবেশ – স্বদেশী যুগের রাজনৈতিক কর্মী, কবি, গীতিকার ও সাহিত্য সাধক;
- আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন – বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ;
- পূর্ণচন্দ্র দাস – ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
- চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী – মাদারিপুর সমিতি ও যুগান্তর বিপ্লবী, বালেশ্বর রনাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ;
- নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত – মাদারিপুর সমিতি ও যুগান্তর বিপ্লবী, বালেশ্বর কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ;
- মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত – মাদারিপুর সমিতি ও যুগান্তর বিপ্লবী, বালেশ্বর কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে শহীদ;
- স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ – স্বদেশী যুগের বিশিষ্ট বিপ্লবী ও বীর সাধক;
- খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ – শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক; যুক্ত বঙ্গের এডিপিআই(১৯৩৯-৪৫), জগন্নাথ কলেজ এর প্রিন্সিপাল ও রেক্টর;
- গোষ্ঠ পাল – ফুটবলার, ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী উপাধিতে (১৯৬২) ভূষিত হন;
- আলিমুদ্দিন আহম্মদ, খান সাহেব – মোক্তার ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ;
- ডাঃ জোহরা কাজী – ভারতীয় উপমহাদেশ এর প্রথম মহিলা চিকিৎসক;
- মুন্সী মোজাহারুল হক – রাজনীতিবিদ ও মাদারিপুরের প্রথম লঞ্চ ব্যাবসায়ী;
- ইস্কান্দার আলী খান – বিশিষ্ট আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ; এমএলএ;
- ফনী ভূষণ মজুমদার – এমএলএ, এমপিএ, মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, মন্ত্রী;
- দ্বারকানাথ বারুরী – যুক্ত বঙ্গের ও পূর্ব পাকিস্তান মন্ত্রী, পাকিস্তান কন্সটিটিউশন কমিশনের সদস্য(১৯৬০);
- ডাঃ গোলাম মওলা- ভাষা সৈনিক, এমএলএ, এমএনএ একুশে পদক(২০১০) প্রাপ্ত; বিশিষ্ট চিকিৎসক;
- ড. ফজলুর রহমান খান – বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি; আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ারিং রেকর্ডের “ম্যান অব দ্যা ইয়ার”(১৯৬৬,৬৯,৭১,৭২), মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার(১৯৯৯) প্রাপ্ত;
- প্রফেসর গোলাম ওয়াহেদ চৌধুরী – রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষক ও সমাজসেবী; পাকিস্তান কন্সটিটিউশন কমিশনের অনারারি উপদেষ্টা(১৯৬১) ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী(প্রাক্তন);
- রাজিয়া মাহবুব- বিশিষ্ট সাহিত্যিক; ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৫৭) প্রাপ্ত; লন্ডনের “ইসাবেলা ইটন পুরস্কার” (১৯৬৭) প্রাপ্ত; বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১) প্রাপ্ত;
- পদ্মা দেবী – ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্রাভিনেত্রী;
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – প্রখ্যাত কবি, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক;
- আবুল হোসেন মিয়া – কবি, শিশু সাহিত্যিক, শিক্ষক;
- রশীদ তালুকদার – বিজ্ঞান জাদুঘর (১৯৭৮) ও বিপিএস (১৯৮২) স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক;
- আভা আলম – সঙ্গীত শিল্পী; মরনোত্তর একুশে পদক(১৯৭৮) স্বর্ণপদক প্রাপ্ত;
- ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ – ভূ-তত্ত্ববিদ ও গবেষক;
- স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান – আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার তিন(৩) নম্বর আসামী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক;
- মৌলভী আচমত আলী খান – এমপিএ, এমপি; বঙ্গীয় গভর্ণর মেডেল(১৯৪৩) প্রাপ্ত; মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার(২০১৬) প্রাপ্ত;
- বাসুদেব দাশগুপ্ত – হাংরি আন্দোলন এর বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক;
- প্রফেসর ড. জিল্লুর রহমান খান – রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষক ও লেখক;
- আব্দুল মান্নান শিকদার – ভাষা সৈনিক; প্রাক্তন এমপি ও প্রতিমন্ত্রী;
- অসীম সাহা – কবি ও ঔপন্যাসিক; বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১২) প্রাপ্ত; একুশে পদক (২০১৯) প্রাপ্ত।
- বাশার মাহমুদ – কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সাংবাদিক, গবেষক;
- সৈয়দ আবুল হোসেন – রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক; প্রাক্তন এমপি ও মন্ত্রী;
- শাজাহান খান – রাজনীতিবিদ; এমপি; প্রাক্তন মন্ত্রী;
- আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম) – রাজনীতিবিদ ও কৃষিবিদ; প্রাক্তন এমপি;
- মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদ – এডমিরাল, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান (২০১৫-২০১৯);
- এ. বি. এম. খায়রুল হক – প্রখ্যাত আইনবিদ এবং ১৯ তম প্রধান বিচারপতি (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ – ১৭ মে ২০১১);
- মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান – অধ্যাপক ও গবেষক। স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার(২০১৭) প্রাপ্ত;
- নকুল কুমার বিশ্বাস − কণ্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার;
- নারগিস আক্তার – চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০০১, ২০১০) প্রাপ্ত;
- সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন – চিত্রনাট্য লেখক, চলচিত্র পরিচালক।
Leave a Reply