নড়াইল
ক্রিড়া-সংস্কৃতি-মুক্তিযুদ্ধ
চিত্রার কোলে নড়াইল সমৃদ্ধ
নড়াইল একটি প্রাচীন জনপদ। কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এই জেলা আপন মহিমায় ভাস্বর, অবারিত মাঠ, শ্যামল প্রান্তর, ইছামতি, চাচুড়ী সহ অসংখ্য বিলের স‘ফটিক স্বচ্ছ কালোজল, জলধারা , মধুমতি, চিত্রা, নবগঙ্গা আর কাজলা নদীর প্রবাহমানতা এই জেলাকে দিয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়। নড়াইলের লোকজ ঐতিহ্যের মধ্যে যাত্রাগান, পালাগান,নৌকাবাইচ, হাডুডু খেলা, লাঠি খেলা, হালুইগান, ষাড়ের লড়াই , বিভিন্ন মেলা, পিঠাগুলি, কবিগান, জারিগান, গাজিরগান, বৃষ্টির গান ইত্যাদি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ।
নড়াইল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। ১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীন নড়াইল মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। নড়াইল শব্দটি স্থানীয় লোকমুখে নড়াল নামে উচ্চারিত হয়। ঐ সময় নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া থানার সমন্বয়ে এই মহাকুমা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ নড়াইল মহাকুমাকে জেলায় রুপান্তরিত করা হয়। এই জেলার উত্তরে মাগুরা জেলার শালিখা ও মহম্মদপুর থানা, দক্ষিণে খুলনা জেলার তেরখাদা, দীঘলিয়া ও মোল্লার হাট, পূর্বে ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ এবং পশ্চিমে যশোর জেলার অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও কোতয়ালী থানা অবস্থিত।
নড়াইল জেলার আয়তন ৯৯০.২৩ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা সংখ্যা- ৭,২১,৬৬৮ জন। সংসদীয় আসন- ২টি, উপজেলা- ৩টি (নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া), থানা- ৪টি, পৌরসভা- ৩টি, ইউনিয়ন- ৩৯ টি, গ্রাম- ৬৩৫টি, মৌজা-৪৪৬টি
নড়াইলকে মোটামুটি নদী সমৃদ্ধ অঞ্চল বলা যায়। এই জেলার উপর দিয়ে মধুমতি, চিত্রা, কাজলা, নলিয়া, নড়াগাতি, নবগঙ্গা, কালিগঙ্গা ও আঠারবাঁকি ছাড়াও শিরোমনি শাখার গাল ও হ্যালিক্যাকস ক্যানেল প্রবাহিত ছিল। তন্মধ্যে ৩/৪ টি নদী মৃত বলা চলে, অপর ৮/৭টি নদী এখন প্রবাহমান। লোকসংস্কৃতি হিসেবে এ জেলায় জারীগান, কবিগান, কীর্ত্তন, হালুইগান, সারীগান, পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী প্রভৃতি লোকসঙ্গীতের প্রচলন রয়েছে। ছড়া, ধাঁধা, মন্ত্র, প্রবাদ, প্রবচন, লোকগাঁথা বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন উৎসবে মেয়েলী গান, অনাবৃষ্টির সময় কাঁদামাটি মেখে মেঘকে আহবান করে গান ও সিরনি বিতরণ, রোগবালাই দূর করার উদ্দেশ্যে আশ্বিন মাসের শেষ দিন ডালাভর্তি ফুলপাতা পানিতে ভাসানো, গো-মড়ক ঠেকাতে সিরনি বিতরণ ইত্যাদি লোকাচার। এছাড়াও নৌকাবাইচ, চিবুড়ি, কুতকুত, এপেন্ডি বায়োস্কোপ, ইচিংবিচিং, বালিহাঁস, কানামাছি, এক্কাদোক্কা ইত্যাদি লোকক্রীড়া উল্লেখযোগ্য।
ভূতাত্বিকদের মতানুসারে আনুমানিক দশ লক্ষ বৎসর পূর্বে গঙ্গা নদীর পলিমাটি দ্বারা যে গঙ্গেয় ব-দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছিলো’ সেই দ্বীপসমূহের অন্তর্গত এক ভূখন্ডই হল বর্তমান নড়াইল জেলা। তৎকালে নড়াইল জেলা সাগর তীরবর্তী বর্তমান সুন্দরবনের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ষাট, সত্তর বৎসর পূর্বেও এই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পুকুর বা কুয়া খনন করে হরিণ, বাঘ ও অন্যান্য জীবজন্তুর ফসিল পাওয়া যেত এবং তা থেকে প্রমাণিত যে নদীমাতৃক এই জেলার সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনভূমি বিস্তৃত ছিলো।
দর্শনীয় স্থান
- সুলতান কমপ্লেক্স
- বাধাঘাট,
- নিরিবিলি পিকনিক স্পট
- অরুনিমা ইকো পার্ক
- চিত্রা রিসোর্ট, সীমাখালী
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স,নুর মোহাম্মদনগর
- নড়াইল জমিদার বাড়ি,
- হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি,
- গোয়াল বাথান গ্রামের মসজিদ (১৬৫৪),
- কদমতলা মসজিদ,
- নালদীতে গাজীর দরগা,
- উজিরপুরে রাজা কেশব রায়ের বাড়ী,
- জোড় বাংলায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত রাধাগোবিন্দ মন্দির,
- লক্ষ্মীপাশায় কালিবাড়ী,
- নিহিনাথতলার বড়দিয়াতে মঠ,
- মধুমতি নদীর উপর নির্মিত চাপাইল সেতু,
- আঠারো বাকি নদীর তীরবর্তী দৃশ্য।
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
- মাশরাফি বিন মর্তুজা
- চিত্রশিল্পী এস, এম সুলতান
- কমরেড অমল সেন
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ
- রবি শংকর
- নিহার রজ্ঞন গুপ্ত
- কবিয়াল বিজয় সরকার
- উদয় শংকর
- কমল দাস গুপ্ত
- সর্বকনিষ্ঠ শহীদ বুদ্ধীজীবি শেখ আব্দুস সালাম
- জারী সম্রাট মোসলেম উদ্দিন বয়াতী
- অমৃতনাল দাস অমৃত নগর জমিদার বাড়ী
কিভাবে যাবেন?
রাজধানী ঢাকা থেকে জেলা সদরের দূরত্ব ২১৪ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে নড়াইল জেলায় সড়ক পথে যাতায়াত করতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা, তবে ফেরী পারাপারের সময় যানজট থাকলে সময় বেশী লাগে।
গাবতলী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস নড়াইলের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। এ সব বাস গুলোর মধ্যে পর্যটক পরিবহন, দিগন্ত পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সুন্দরবন সার্ভিস প্রা: লি:, দ্রুতি পরিবহন, আরা পরিবহন ও নড়াইল এক্সপ্রেস অন্যতম।
আকাশপথ- এখানে কোন বিমানবন্দর না থাকায় সরাসরি আকাশপথে ভ্রমণ সম্ভব না হলেও ঢাকা থেকে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোর বিমান বন্দরের নেমে ভাড়ায় চালিত গাড়ীতে তুলনামুলক স্বল্প সময়ে পৌছানো সম্ভব। যশোর থেকে নড়াইল যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টার মত।
খাওয়া দাওয়া
রাত্রী যাপন
Leave a Reply