নীলফামারী
নীলের দেশ খ্যাত নীলফামারী জেলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভূ-সংস্থানে বেশ সমৃদ্ধ যা অন্যান্য জেলা থেকে এই জেলাকে কিছুটা হলেও আলাদা করেছে। জেলার উত্তর দিক উচু ও খরা পিরিত অঞ্চল, পূর্ব দিক তিস্তার বালুকাময় এলাকা, এই উচু ও বালুময় ভূমি ধীরে ধীরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে উর্বর কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। নীলফামারী অতীত ইতিহাসের অনেক সাক্ষী বহন করে। এ জেলায় সত্যপীরের গান, হাঁস খেলা, মাছ খেলাসহ অনেক উৎসব ও মেলার আয়োজন হয়। কৃষি প্রধান এই জেলার প্রধান শিল্প বয়ন, চাল, বাশবেত প্রভৃতি। দারোয়ানী বস্ত্র কল এ জেলার সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়া উত্তরা ইপিজেড ও সৈয়দপুর বিসিক শিল্প নগরীর মত আছে শিল্প পার্ক।
নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অবস্থিত ভারত সীমান্তঘেষা একটি জেলা। নীলফামারী জেলার উত্তর সীমান্তে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা এবং অন্য দিকে লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলা অবস্থিত। ১৮৭৫ সালে মহকুমা ও পরে ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়।প্রথম নির্বাচিত এবং বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন।
রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ৪০০ কিঃমিঃ দুরে ১৫৮০.৮৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নীলফামারী জেলায় ৬ টি উপজেলা, ৪ টি পৌরসভা, মোট ৬০ টি ইউনিয়ন আছে। উপজেলাগুলো হলো- নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ও সৈয়দপুর উপজেলা।
লোকসংস্কৃতি হিসেবে এ জেলায় ভাওয়াইয়া গানের বিশেষ প্রচলন রয়েছে। প্রচলিত গানগুলো কাহিনী প্রধান। বিষহরি বা মনসার গান, হুদুমদেওর গান, মহররমের জারি, বিয়ের গান বা হেরোয়া, ভাসান যাত্রা, সত্যপীরের গান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নয়নশরি-বোষ্টম বাউদিয়া, শীতল শরি-জানকপালা, অম্বলশরি-পিছল বাউদিয়া, পয়মাল শরি-ভোদাইমেম্বার প্রভৃতি ‘শরির গান’ বেশ জনপ্রিয়। তিনদিন থেকে ছয় দিনের নবজাতককে ঘিরে আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীরা ‘পাসটি’ নামের একটি উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া এ জেলায় অষ্টমঙ্গলা, ভাদরকাটানী, পৌষকাটানী প্রভৃতি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। এ জেলার প্রধান নদী: তিস্তা, যমুনেশ্বরী, বুড়ি তিস্তা, ঘাঘট ।
নীলফামারী মূলগতভাবে একটি কৃষি নির্ভর জেলা। জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল ভুট্টা, ও মরিচ। জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় প্রচুর ভুট্টার চাষ হয়। ডোমার, ডিমলায় মরিচের চাষ হয়। এছাড়া আলু, ধান, গম, সরিষা, পাট, তামাক প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়।
দর্শনীয় স্থান
- নীলসাগর দীঘি
- ধর্মপালের গড়
- চীনা মসজিদ
- তিস্তা ব্যারেজ ও সেচ প্রকল্প
- কুন্দুপুকুর মাজার
- হযরত শাহ কলন্দর মাজার
- হরিশচন্দ্রের পাঠ
- ময়নামতির দূর্গ
- ভীমের মায়ের চুলা
- চীনা মসজিদ
- সৈয়দপুর চার্চ
- সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা
- দারোয়ানী টেক্সটাইল মিল
- উত্তরা ইপিজেড
- সৈয়দপুর বিমানবন্দর
- ডিমলা রাজবাড়ী
- বালাপাড়া গণকবর
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সমুহ
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
- শাহ কলন্দর ইসলামী ব্যক্তিত্ব,
- কাজী কাদের, সাবেক মন্ত্রী (পাকিস্তান আমল);
- মশিউর রহমান (যাদু মিয়া) (জিয়াউর রহমান সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন);
- শহীদ জননী জাহানারা ইমাম;
- খয়রাত হোসেন, সাবেক মন্ত্রী;
- বিচারপতি মোস্তফা কামাল, সাবেক প্রধান বিচারপতি;
- শফিকুল গনি স্বপন, সাবেক মন্ত্রী;
- মহেশ চন্দ্র রায়, উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী।
- হরলাল রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী;
- রথীন্দ্রনাথ রায়, ভাওয়াইয়া শিল্পী;
- আসাদুজ্জামান নূর, নাট্য ব্যক্তিত্ব; বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ; নীলফামারী-২
- আনিসুল হক, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক;
- বেবি নাজনিন, কন্ঠশিল্পী।
- বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন,উপজেলা চেয়ারম্যান, নীলফামারী সদর উপজেলা;
- আহসান হাবিব ভাবনা, অভিনেত্রী ও মডেল
কিভাবে যাবেন?
সড়ক পথে- ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে নীলফামারী জেলা যাওয়ার জন্য এসি ননএসি বাস পাওয়া যায়। এসি বাসের মধ্যে কর্নফুলী এন্টারপ্রাইজ, নাবিল এন্টারপ্রাইজ, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এসআর ট্রাভেলস অন্যতম। কর্ণফুলী ও নাবিল আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেরে গাবতলী হয়ে এবং হানিফ সায়েদাবাদ থেকে ও এসআর কল্যানপুর থেকে ছেরে যায়। বাস সার্ভিসগুলোর মটর যান ও সেবার মান অনুযায়ী ভাড়া বিভিন্ন রকম: নরমাল হলে ৩০০-৪৫০ টাকা, চেয়ার কোচ হলে ৪৫০-৫৫০ টাকা, এবং এসি কোচ হলে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া বিআরটিসি বাসে করে ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া বা রংপুর হতে আসা যায়।
আকাশ পথে- নীলফামারী জেলার অন্তর্গত সৈয়দপুর পৌরসভায় সৈয়দপুর বিমানবন্দর রয়েছে। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত এই বিমানবন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের দৈনিক একাধিক সরাসরি ফ্লাইট বিদ্যমান।
খাওয়া দাওয়া
রাত্রী যাপন
Leave a Reply